দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের সামরিক শাসন জারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় সাধারণ জনতা। ছবি : এএফপি
দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণকে হতবাক করে দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সামরিক শাসন জারির ঘোষণা দেন। এশিয়ার গণতান্ত্রিক এই দেশটিতে গত প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম ঘটে। গভীর রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি ‘রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা’ ও উত্তর কোরিয়ার হুমকির মুখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
তবে খুব তাড়াতাড়িই একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে আসে, বাইরের কোনো হুমকির কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনে নিজের মরিয়া প্রয়াসের কারণেই প্রেসিডেন্ট ইওল এমন সিদ্ধান্ত নেন। খবর বিবিসির।
প্রেসিডেন্ট সামরিক শাসন জারির ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এর প্রতিবাদে হাজারো জনগণ দেশটির পার্লামেন্ট ভবনের চত্বরে জড়ো হন। পাশাপাশি বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা উদ্যোগ নেন পার্লামেন্টে জরুরি ভোটাভুটির মাধ্যমে সামরিক শাসন জারির সিদ্ধান্তকে বাতিল করতে।
এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট ইওল পার্লামেন্টের ভোটের ফলাফলকে মেনে নেন এবং সামরিক শাসন জারির ঘোষণা প্রত্যাহার করেন। আর এই ঘটনার পর এখন তিনি পার্লামেন্টে অভিশংসনের মুখে পড়েছেন, এমনকি নিজের দল থেকেও বহিষ্কার হতে পারেন তিনি।
ঘটনার বিস্তার হয় যেভাবে
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউন সুক ইওল এমন আচরণ করেছেন যেন তিনি অবরোধের মুখে ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে দেওয়া ভাষণে তিনি দেশে ‘নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’ নির্মূলে সামরিক শাসন জারির ঘোষণা দেন। আর এই ঘোষণার পরপরই হেলমেটধারী সৈন্যরা পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে অবস্থান নেয়। এ সময় হেলিকপ্টারগুলোকেও ভবনের ছাদে অবতরণ করতে দেখা যায়। স্থানীয় সময় রাত ১১টায় সামরিক বাহিনীর এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে সব ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয় এবং গণমাধ্যমকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিবিদরা প্রেসিডেন্ট ইওলের এই সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ বলে ঘোষণা করে। এমনকি, ইওলের নিজের দল পিপলস পাওয়ার পার্টি তার এই ঘোষণাকে ‘ভুল উদ্যোগ’ হিসেবে অভিহিত করে।
অন্যদিকে, দেশটির সবচেয়ে বড় বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জায়ে মাউং এমপিদের প্রতি ভোটের মাধ্যমে সামরিক শাসন জারির ঘোষণাকে প্রতিহতের আহ্বান জানান। তিনি সাধারণ নাগরিকদের পার্লামেন্ট ভবনে এসে প্রতিবাদ জানানোরও ডাক দেন।
বিরোধী দলের নেতার ডাকে সাড়া দেয় হাজারো মানুষ। তারা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে হাজির হয়। এ সময় জনতার সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। তবে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিতে এই উত্তেজনা সহিংসতায় রূপ নেয়নি। এ সময় আইন প্রণেতাদের ব্যারিকেড ডিঙিয়ে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করতে দেখা যায়।