সুমন সেন চট্টগ্রাম
কোর্ট বিল্ডিংয়ে অফিস করেন, উকিলতা যার পেশা। তবে আইন রক্ষার দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও, নিজের ইচ্ছার বাইরে কিছু ঘটলে প্রথমে হামলা চালান, এরপর দায়ের করেন মামলা। এমনই কুখ্যাত আচরণের জন্য পরিচিত অ্যাডভোকেট আক্কাস উদ্দীন। তার হাত থেকে রেহাই পাননি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের ধারক পেশাদার সাংবাদিকরাও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনজীবী দোয়েল ভবনে চেম্বার করেন আওয়ামী স্বৈরশাসকের দোসর ও একনিষ্ঠ সমর্থক অ্যাডভোকেট আক্কাস উদ্দীন। জুলাই মাসে এক পেশাদার সাংবাদিকের সঙ্গে তার চেম্বার ভবনের লিফটে বাকবিতণ্ডা হয়। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর আক্কাস উদ্দীন তাকে চড়-থাপ্পড় মেরে ধাক্কা দিয়ে হেনস্তা করেন। এই পুরো ঘটনাটি ভুক্তভোগী সাংবাদিক নিজের মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করেন এবং পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, উকিল আক্কাস উদ্দীন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার পাশাপাশি তাকে চরমভাবে অপমান করেন। তবে এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। নিজের প্রভাব খাটিয়ে ভিডিওর সূত্র ধরে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন ও গুমসহ বিভিন্ন অপরাধে বানোয়াট মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী সরকারের দাপট দেখিয়ে এবং নিজের রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল বানিয়ে আক্কাস উদ্দীন নিয়মিত এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যান। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তার অমতে কেউ গেলে প্রথমে শারীরিক ও মানসিক হয়রানি করেন, পরে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানির মাত্রা বাড়ান।
সাংবাদিক সমাজ এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “এটি কেবল একজন সাংবাদিকের উপর হামলা নয়, বরং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত। এর সঠিক বিচার না হলে বাকস্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
পিবিআই তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, এ ধরণের সামন্য বিষয় নিয়ে মামলা করার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। উনি কেনো এমনটা করলেন বোধগম্য নয়।
ট্রাস্ট অব হিউম্যান রাইটস্ বাংলাদেশ (টিএইচআরবি)-এর মহাসচিব আবদুল্লাহ মজুমদার বলেন, আইনজীবীরা যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কাজে জড়িয়ে যায়, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে কি-না সংশয় দেখা দিয়েছিলো স্বৈরশাসক এর শাসনামলে।
যেখানে একজন সাংবাদিক পর্যন্ত মানবাধিকারে সুরক্ষিত নয়, সেখানে সাধারণ জনগণের কী হবে ভাবার সময় এসেছে!
একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন,জনৈক এডভোকেট এর এক্ষেত্রে আরো সহনীয় হওয়া দরকার ছিলো। আমাদের প্রত্যেকের উচিত,আইনী সেবাগ্রহীতা দের সাথে ভালো আচরণ করা।
আমরা প্রত্যাশা করি বিজ্ঞ আইনজীবী ও সংবাদকর্মী পরস্পরের মধ্যে বিষয়টি মিমাংসা করে নিবেন।
অ্যাডভোকেট আক্কাস উদ্দীনের এমন কর্মকাণ্ডের পর তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, আইন ও ন্যায়বিচারের হাতিয়ার হাতে থাকা একজন পেশাদার আইনজীবী কিভাবে এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হতে পারেন?